পোষ্ট নং-৬৮ঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনাঃ
শিশুর নাম রাখা ও আকিকার বিধানঃ
প্রারম্ভিকাঃ
নাম হলো পরিচয় ও নিদর্শন, নামের আরবি শব্দ হলো ‘ইসম, ইসম অর্থ চিহ্ন, আলামত, পরিচিতি, লক্ষণ, উন্নয়ন, বর্ধন, সম্মান, সুনাম, যশ, খ্যাতি ইত্যাদি।
মানুষ দুনিয়ায় আসার পর প্রথম যা লাভ করে তা হলো তার নাম-পরিচয়, মৃত্যুর পরেও মানুষের নাম বেঁচে থাকে, তাই শিশুর সুন্দর নাম তার জন্মগত অধিকার।
শিশুর নাম রাখার অধিকার কার বা কাদের উপরঃ
শিশুর নাম রাখার অধিকারী হলেন প্রথমত মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাই-বোন, ফুফু-খালা, চাচা-মামা ও আত্মীয়-স্বজন, নাম যেনো অর্থবহ হয় তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যে কেউ নামের প্রস্তাব বা পরামর্শ দিতে পারে।
অভিজ্ঞ আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তি প্রস্তাবিত নামের অর্থ, গুণাগুণ ও তাৎপর্য অনুসারে এর প্রাধান্য ব্যাখ্যা করবেন, এরপর সন্তানের অভিভাবকেরা তাদের পছন্দনীয় নাম গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সুন্দর অর্থবহ ও শ্রুতিমধুর নাম হওয়া বাঞ্ছনীয়ঃ
নাম অর্থবহ, সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সহজ হওয়া বাঞ্ছনীয়, মন্দ অর্থবহ বা গুণাগুণ সংবলিত নাম রাখা উচিত নয়। (বুখারি : ২/৯১৪)
তাই ক্ষতিকারক ও আল্লাহর গজব সংবলিত কারো নাম রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না, কেননা নামের প্রভাব মানুষের সত্তা ও গুণাগুণের ওপরও পড়ে, আর হাশরের ময়দানে প্রত্যেককে তার নামেই ডাকা হবে। (আবু দাউদ : ২/৬৭৬)
নাম পরিবর্তন করার বিধানঃ
কারো নাম ভালো অর্থবহ না হলে তা পরিবর্তন করে রাখা যায়, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন সাহাবির নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন। (তিরমিজি : ২/১১১)
সপ্তম দিন নাম রাখা ভালো, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের নাম রাখো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৩২)
আগে-পরে হলেও কোনো ক্ষতি নেই। জন্মের আগেও নাম নির্ধারণে বাধা নেই। (আবু দাউদ : ২/৪৪৬)
আকিকা করা একটি সুন্নত, সপ্তম দিন আকিকা করা আরেকটি সুন্নত, আম্মাজান আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা.) বলেন, ‘সপ্তম দিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু.) ও হোসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আকিকা দিয়েছেন এবং তাঁদের নাম রেখেছেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৩১১)
কোনো কারণে সপ্তম দিন আকিকা করা সম্ভব না হলে পরে সুবিধামতো সময়ে আকিকা করা যাবে, একটি ছাগল জবাই করার দ্বারা আকিকার সুন্নত আদায় হয়ে যায়, তবে ছেলে শিশু হলে দু’টি এবং মেয়ে শিশুর জন্য একটি ছাগল জবাই করা উত্তম, আকিকার গোশত কোরবানির গোশতের মতো সবাই খেতে পারে। (শরহুল মুহাজ্জাব : ৮/৪৩০)
বংশপরিচয়ের জন্য ছেলে বা মেয়ের নামের সঙ্গে বাবার নাম বা বংশের নাম ব্যবহার করা উত্তম।
বিয়ের পর নারীর নামের সঙ্গে নিজ বংশের নামের পরিবর্তে স্বামীর বংশের নাম অথবা পিতার নামের পরিবর্তে স্বামীর নাম যুক্ত করা অযৌক্তিক, নবী পত্নীরা ও সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীরা এমনটি করেননি।
সন্তানের নাম মা বা বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা জরুরি নয়, একইভাবে জরুরি নয় ছেলের নামের সঙ্গে বাবার নাম ও মেয়ের নামের সঙ্গে মায়ের নাম অথবা তার বিপরীত উল্লেখ করা। অর্থাৎ মা-বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়, নামটি সুন্দর হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর নামকরণের পর তার জন্মনিবন্ধন করা উচিত, এতে তার নাগরিক অধিকার ও জাতীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়।
চিকিৎসা সেবা, শিক্ষালাভ ও আন্তর্জাতিক পরিষেবাগুলো প্রাপ্তির পথ সুগম হয়, ভবিষ্যতে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আইনগত ক্ষেত্রে সুবিধা গ্রহণ করা সহজ হয় এবং জটিলতামুক্ত হওয়া যায়।
প্রথম স্কুল বা বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুর নাম ও মা-বাবার নাম সঠিকভাবে লেখা উচিত, এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব বেশি।
জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস বা কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্র সঠিক নাম পূর্ণরূপে লেখা উচিৎ, তা নাহলে পরবর্তিতে নানা সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।