﷽
যাদুর জিনিষ বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ
পোষ্ট নং–০১ (রুকইয়াহ–যাদু/০৪)
যাদুর জিনিষ, কবিরাজী জিনিষ বা তাবিজ কিভাবে নষ্ট করবেন।
যাদুর জিনিষ খুঁজে বের করতেই হবে, কে যাদু করেছে তা জানতে হবে এমন মনোভাব রাখা উচিৎ নয়, আমাদের দরকার সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা, সুতরাং কে যাদু করেছে, কি দিয়ে করেছে বা কাকে দিয়ে করিয়েছে এর পেছনে পড়ে থাকার কোনো দরকার নাই।
যদি স্বাভাবিকভাবে কোনো তাবিজ, কবিরাজি জিনিষ বা সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়, তাহলে সেগুলো নষ্ট করবেন আর না পাওয়া গেলে চিন্তার কিছুই নাই, আল্লাহর নাম নিয়ে রুকইয়াহ শুরু করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঘটনাই চিন্তা করেন, আম্মাজান আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি সেগুলো (কুঁপ থেকে) বের করবেন না? রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: না! আল্লাহ আমাকে আরোগ্য ও শিফা দান করেছেন, আমি এসব মানুষের মাঝে প্রকাশ করতে সংকোচবোধ করছি, এরপর নির্দেশ দিলেন যেন সেটা (কুয়া) মাটিচাপা দিয়ে দেয়া হয়।[সহীহ বুখারী– ৫৩৫৪]
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেই আল্লাহ তায়ালা সুস্থ করেছেন, সেই আল্লাহ তায়ালা এখনও আছেন, তার ফেরেশতারা এখনও আছে, আপনি বেশি বেশি দোয়া করতে থাকুন, শারঈ পন্থায় রুকইয়াহ করুন, আল্লাহই যাদু নষ্ট করে দিবেন, চাইলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা পাঠিয়ে সেসব ধ্বংস করবেন, যাদুর জিনিষ খুঁজে বের করার জন্য আপনি প্যারা নিবেন না, এটা নিয়ে চিন্তার কিছুই নাই।
সুস্থতা লাভ করে সুখি ও সুন্দর জিবনের লক্ষ্যে আপনাকে দেওয়া নিচের সাজেশন ফলো করতে থাকুন।
আমল নং-১
এভাবে নিয়ত করে শুরু করবেন।
ইয়া আল্লাহ! আপনার নামে এবং একমাত্র আপনার উপরই ভরসা করে এগুলোর কার্য ক্ষমতা নষ্ট করার জন্য এই আমলগুলো করছি, ইয়া আল্লাহ! আপনার শেফা ও অনুগ্রহ দ্বারা এগুলোর কার্য ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দিন।
আমল নং-২
কোনো তাবিজ, কবিরাজি জিনিষ বা সন্দেহজনক কিছু যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেগুলো নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে ৩ বা ৪ লিটার পরিমান পানি নিন, তারপর সেই পানিতে-
নিচের সুরা ও আয়াতগুলো পড়ে পড়ে ফুঁক দিন….
(১) أَعُوْذُ بِاللهِ ও بِسْمِ الله সহ সুরা ফাতিহা ৩ বার
(২) সুরা আরাফ (আয়াত ১১৭ থেকে ১২২) ৩ বার
أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ * فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ * فَغُلِبُواْ هُنَالِكَ وَانقَلَبُواْ صَاغِرِينَ * وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ * قَالُواْ آمَنَّا بِرِبِّ الْعَالَمِينَ * رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ *
(৩) সুরা ইউনুস (আয়াত ৮১ ও ৮২) ৩ বার
أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ*وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
(৪) সুরা ত্বহা (আয়াত নং ৬৯) ৩ বার
أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ
(৫) بِسْمِ الله সহ সুরা ফালাক ৩ বার
(৬) بِسْمِ الله সহ সুরা নাস ৩ বার
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
মেয়েরা হায়েজ/নেফাস চলাকালীন সময়ে, গর্ভাকালীন সময়ে এটা করবেন না, অন্য কাউকে দিয়ে করাবেন।
লক্ষণীয়ঃ
(ক) তাবিজ, পুতুল, কাগজ, যাদুকরের দেয়া যে কোনো কিছু এই পড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ, কাগজে লেখা থাকলে সেটা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন, লেখা মুছার পরে ছিড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন, তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন, পুড়ানোর সময়ে নিশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া যেনো ভিতরে প্রবেশ না করে এটা লক্ষ্য রাখবেন।
(খ) তাবিজ খালি হাতে না ধরে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন, তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়তে থাকবেন।
(গ) তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করে লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন, ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরী, নিজে করতে না পারলে কোনো কর্মকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।
(ঘ) তাবিজে গিট দেয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন, কোনো পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোনো পিন আছে কিনা, থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন, পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন, জীবন্ত কোনকিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন সন্দেহজনক কিছু যেমন তাবিজ বা পিন আছে কিনা, থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন, তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে, তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙ্গে বের করা লাগতে পারে, যাই থাকুক, ভাঙ্গা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন, একইভাবে যাদুকরের দেয়া তেলপড়া, পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্রও এই পড়া পানিতে ঢালবেন।
(ঙ) ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পুড়ানোর জন্য, সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোনো নিরিবিলি পরিত্যক্ত জায়গা ঠিক করে নিন।
(চ) কোনো জায়গায় তাবিজ বা কোনো যাদুর জিনিষ রাখা আছে এমন সন্দেহ হলে, সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের নিয়মে পানি তৈরি করে সেই পানিটা ছিটিয়ে দিন, কারো বাসার দেয়ালে, ফ্লোরে অথবা যেকোন স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে, তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে, অনেক সময় বাসা বানানোর সময়ে প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে সন্দেহ হলে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন, আর দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা যেনো এসব তাবিজ বা যাদুর জিনিষ নষ্ট করে দেন।
(ছ) জ্যোতিষীর দেয়া কোনো পাথরের আংটি থাকলে এটাও তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন, বেশ কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন, জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে, তাই কোনমতেই এই পাথর রেখে দেয়া যাবেনা।
(জ) আপনার নিজের ব্যবহারে কোনো তাবিজ, তাগা বা কবিরাজি কিছু থাকলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তা নষ্ট করবেন, তারপর তাবিজ বা কবিরাজি জিনিষ ব্যবহার করার জন্য খাস দিলে তাওবা করবেন।
হে আল্লাহ্! আমাদেরকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুন।
(সমাপ্ত)