পোষ্ট নং-১২
#মাসনুন_আমল_বা_দৈনন্দিন_হেফাজতের_আমলঃ
#সকল_নারী_পুরুষের_জন্য_আজীবন_করনীয়ঃ
বদ নজর, যাদু, জ্বিন, ওয়াস-ওয়াসা এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার শার’ঈ উপায়!
——————
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম,
আমাদের সবারই, বদ-নজর, যাদু-টোনা, ওয়াস-ওয়াসা, জ্বিন-শয়তান ও অন্যান্য সকল প্রকারের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য এবং বিশেষ বিশেষ ফায়েদা হাসিলের জন্য, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শিখিয়ে দেয়া মাসনুন (দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়) আমলগুলো যত্ন সহকারে করা উচিত।
———————-
যে কোনো কাজের শুরুতে (কাজের ধরন অনুযায়ী) কিছু দুয়া রয়েছে, এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্য, রাতে ও ঘুমের পূর্বে কিছু নির্দিষ্ট আমল ও অজিফা রয়েছে, যা কুরআন (কালামুল্লাহ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ থেকে আমরা পেয়ে থাকি, এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহ সম্মত প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন আমল বলে।
এসব আমলের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বাড়ে।
————————
সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের; বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ণ অনেক দু’য়া ও যিকর হাদিসে আছে, সবকিছু বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করা সম্ভব না, আর সব সময় সবগুলোর ওপর আমল করাও সম্ভব না, তাই আমরা এখানে অল্প কিছু (অতি প্রয়োজনীয়) মাসনুন দু’য়া এবং আমল এর বিষয় উল্লেখ করছি, আমরা সকলেই এগুলো আমল করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
(এর পাশাপাশি বদনজর থেকে বাঁচার উপায় এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় লেখা দুটো দেখতে পারেন, এগুলো পাবেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর লেখা লিংক গুলোতে)
আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সকলকে এসকল আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।
আর হ্যাঁ! আরবি দু’য়া অথবা কুরআনের আয়াতের উচ্চারণ বাংলায় লিখে দিলে সঠিক উচ্চারণ আসেনা, তারপরও যারা আরবী একেবারেই পারেন না, তাদের সুবিধার জন্য বাংলায় উচ্চারণ লিখে দিলাম, আপনারা অবশ্যই (বাংলায় রিডিং) পড়ার পাশাপাশি কারো থেকে সরাসরি (উচ্চারণ) শুনে নিবেন, তাহলে অনেকটা সহজ ও সঠিক হবে ইনশাআল্লাহ, (আর যারা আরবী একেবারেই পড়তে পারেন না, তাদের উচিৎ অতি সত্বর, গুরুত্বের সাথে আরবী পড়া শেখার ব্যবস্থা করা)।
অতিরিক্ত আরও অনেক দু’য়াসহ একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ বানানো হয়েছে, পাওয়া যাবে
এই লিংকে- http://bit.ly/masnun-app
[ক] সকাল-সন্ধ্যার আমল
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব)
সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়া, বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
(বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম)
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া, সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে..। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)
#তিনঃ সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াতের অংশ-
حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
(হাসবি ইয়াল্লা-হু লা-ইলা-হা ইল্লা- হুউ, অালাইহি তাওয়াক কালতু ওয়া হুয়া রব্বুল ‘অারশিল ‘অাযীম)
যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় সাতবার এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (সুনানে আবি দাউদ)
সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া, সব ধরনের অনিষ্ট থেকে হিফাজতের জন্য এটা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শিখানো আমল। (সুনানে আবি দাউদ)
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ্, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িং- ক্বদীর)
প্রতিদিন সকালে ১০০বার পড়া, এর অনেক বেশি ফজিলত, এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটা পরিক্ষিত আমল। (বুখারি, মুসলিম হাদিস নং ৪৮৫৭)
একশতবার না পারলে, অন্তত ফজর ও আসরের পর ১০বার করে পড়া। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করা, না হয় যে কোনো আজওয়া খেজুর হলেও হবে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে, সেদিন তাকে কোনো বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী)
ক. ওযু করে ঘুমানো, তাহলে ফিরিশতারা হিফাজতের জন্য দুয়া করতে থাকে, ডান কাত হয়ে ঘুমানো। এমনিতেও সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা সুন্নাত। (মু’জামুল আওসাত; সনদ হাসান-জায়্যিদ)
খ. শোয়ার পূর্বে কোনো কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ৩বার করে ঝেড়ে নেয়া। (মুসলিম)
গ. আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারী)
ঘ. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। (বুখারী)
ঙ. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে, হাতের তালুতে ফুক দেওয়া, এরপর পুরো শরীরে ঐ হাত বুলিয়ে নেয়া, এভাবে ৩ বার করা। (বুখারী)
১. টয়লেটে ঢুকার পূর্বে দোয়া পড়া-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবছি ওয়াল খবা-ইছ)
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ জ্বিন ও খারাপ পরী থেকে। (সহীহ মুসলিম, ৩৭৫)
২. বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে পড়া [*]
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
(অাল্লা-হুম্মা ইন্নী অাস অালুকা খইরহা- ওয়া খইরা মা- জাবালতাহা- অালাইহি, ওয়া অা’উযুবিকা মিং- শাররহা- ওয়া শার”র” মা- জাবালতাহা- অালাইহি)
[*] এবিষয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, অনেকে এটি স্ত্রীর মাথায় হাত রেখেই পড়তে হবে। কিছু হাদিসে মাথায় হাত রেখে পড়ার কথা থাকলেও, প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোতে কিন্তু স্ত্রীর কাছে গিয়ে শুধু পড়ার কথা আছে। (সুনানে আবি দাউদ ২২৪৩ এবং ইবনে মাযাহ ১৯০৮ দ্রষ্টব্য)
৩. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া।
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
(বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা-রযাকতানা-)। (বুখারী, ৪৮৭০)
৪. দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া-
أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
(আ’উযু বিল্লা-হিল অাযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্ব-নিহিল ক্বদীম, মিনাশ শাইত্ব-নির রজীম)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেলো। (সুনানে আবি দাউদ, ৩৯৩)
৫. বিসমিল্লাহ বলে দরজা-জানালা লাগানো।
৬. খাওয়া ও পান করার আগে বিসমিল্লাহ বলা।
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুন (আমীন)।