﷽
#রুকইয়াহ_শরঈ’য়াহ_চিকিৎসা_কি?
★পারিভাষিক সংজ্ঞা হচ্ছে কুরআন শরীফের সুরা ও আয়াত, আল্লাহর নামের যিকর অথবা হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সালাফে সালেহীন থেকে বর্ণিত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়া’লার কাছে রোগ-সমস্যা বা বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া কিংবা রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করা, রুকইয়া হচ্ছে শারঈ’য়াহ সম্মত (কুরআন-সুন্নাহ মুতাবেক) বৈধ চিকিৎসা পদ্ধতি।
—————————————
# রুকইয়াহ_শরঈ’য়াহ_চিকিৎসা_কেনো_করবেন?
★ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন, প্যারানরমাল সমস্যা (বদনজর-যাদুটোনা-জ্বিনের আছর)এর কারনে জীবনের অধিকাংশ সময় অসহ্য দুঃখ-কষ্টে পড়ছেন, প্রতিটা ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে বিফল হয়েই ফিরতে হচ্ছে, কিছুতে উন্নতি-ভালো কিছু হচ্ছেনা সবকিছুতে শুধু বাঁধা-বিপত্তি, এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়া’লার উপর ভরসা করে সুস্থতা লাভের জন্য এবং সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এই রুকইয়ার আমল খুবই উপকারী, রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং নিজে, সাহাবা(রাদ্বিয়াল্লাহু আ’নহুমগণ)এবং পরবর্তী সালাফে সালেহীনগণও এই রুকইয়াহ শারঈ’য়ার মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
রুকইয়াহ হচ্ছে জীবন চলার পথে… অনাকাংখিত সমস্যার কারনে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বারবার বাঁধাগ্রস্থ (রোগ বা ক্ষতিগ্রস্থ) হলে, সেই বাঁধাগুলো বদ-নজর, যাদুটোনা ও জ্বিন সমস্যার কারনে হয়ে থাকলে, তা দূর করে দিয়ে আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে(আগের অবস্থানে)ফিরিয়ে আনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে(অর্থাৎ সুস্থতা এবং সুন্দর জীবনের জন্যই রুকইয়াহ)।
——————–
রুকইয়ার_দ্বারা_কি_মনে_যা_চায়_তাই_হাসিল_করা_যায়?
রুকইয়াহঃ এমন কোনো বিষয় না, যা আপনাকে অসাধ্য সাধন করেই দিবে, আপনার মনের আশা পূরন করেই দিবে, বিয়ের ব্যবস্থা, বাচ্চার ব্যবস্থা করেই দিবে, আপনি যেমনটি চান ঠিক তেমনটি হবেই হবে, এ ধরণের চিন্তা-ভাবনা করবেন না, আপনার নিয়ত সহিহ থাকতে হবে, সঠিকভাবে আমল চালিয়ে যেতে হবে আপনার সুস্থতার জন্য, কাঙ্ক্ষিত বস্তু পাওয়ার জন্য, নসিবে রাখলে হবে, নসিবে না রাখলে হবেনা, আল্লাহ তায়ালার উপর এই বিশ্বাস ও আস্থা নিয়েই রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে ইনশাআল্লাহ।
******************
রুকইয়াহ_করতে_চাইলে_আপনার_করণীয়ঃ
(ক) তদবীরঃ আপনার রোগ বা সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য/ সমস্যা সমাধানের জন্য, নিয়মানুযায়ী গুরুত্বের সাথে একাধারে রুকইয়ার আমল চালিয়ে যেতে হবে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর এজন্য অবশ্যই গুরুত্বারোপ করতে হবে।
——————-
১. পাক্কা নিয়তঃ যত কষ্টই হোক, যত বড় বাঁধাই আসুক না কেনো, বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি না করে, সাজেশন মুতাবেক সঠিকভাবে নিয়মিত এই রুকইয়ার আ’মল করেই যাবো ইনশাআল্লাহ, কিছুতেই থামা যাবেনা, এভাবে নিয়ত করে নিতে হবে, আর কোন রোগ/সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবো অবশ্যই সেই বিষয়টা উল্লেখ করে নিয়ত করে নিতে হবে।
—————————————
২. আপ্রান চেষ্টাঃরুকইয়ার আমল শুরু করলে বা রুকইয়াহ করার নিয়ত করলে, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের বাঁধা-বিপত্তি অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, কখনো কখনো সমস্যা/অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়, মনে রাখতে হবে রুকইয়াতে এই বাঁধা ওই সকল খারাপ/কু প্রভাবের কারনেই হয়ে থাকে ওরা (যাদুকর/জ্বিনেরা)সুস্থ হতে দিতে চায় না, এরা রোগীকে অকেজো/অসুস্থ করে রাখতে বেশি চেষ্টা করে, তাই ওদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবেনা সুস্থ হতে চাইলে রুকইয়াহ চালিয়েই যেতে হবে।
৩. পরিপূর্ণ ধৈর্য্যঃ কিছুদিন রুকইয়ার আমল করে অধৈর্য/অলসতা বশতঃ মাঝপথে রুকইয়ার আমল বাদ দেওয়া যাবেনা, মনে রাখবে একজন রোগী বা ভিকটিম লাখ লাখ টাকা খরচ করে সিংগাপুর যাইতে পারে, ভারত বা বিভিন্ন দেশে যাইতে পারে চিকিৎসার জন্য, দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাস হাসপাতালে শুয়ে থাকতে পারেন, তাহলে রুকইয়ার ক্ষেত্রেও গু্রুত্বারোপ করতে হবে প্রয়োজন হলে ছুটি নিবেন, পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই রুকইয়াহ শুরু করবেন, বছরের পর বছর যাবত যে রোগ বা সমস্যা বয়ে বেড়াচ্ছেন তা থেকে পরিত্রান পেতে একটু সময় তো লাগবেই, সুতরাং ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে রুকইয়ার আ’মল চালিয়েই যেতে হবে।
—————————————
৪. পারিবারিক সাপোর্টঃ রুকইয়াহ চিকিৎসার ক্ষেত্রে পারিবারিক সাপোর্ট বিশেষ প্রয়োজন (বিশেষ করে জ্বিনের রুগীদের ক্ষেত্রে), কারন এ ধরনের রোগীরা রুকইয়াহ করতে গেলে অমনোযোগী বা জ্বিন দ্বারাই বাধাগ্রস্থ হবে, এটা কাংখিত ও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, তাই পরিবারের কেউ দেখভাল করলে, তাক্কিদ দিলে, কখন কি করতে হবে তা মনে করিয়ে দিয়ে রুকইয়াহ করতে সহযোগিতা করলে, অলসতা-অমনোযোগী হলে কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সাহস দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে আ’মল (রুকইয়া) চালিয়ে যেতে সাহায্য করলে।
৫. সঠিকভাবে রুকইয়াহ করাঃ
সহিস শুদ্ধ তেলাওয়াতে, সম্ভব হলে অর্থসহ বুঝে বুঝে সাজেশন মোতাবেক নিয়মিত ও মনোযোগের সাথে সেলফ(নিজের জন্য নিজে)রুকইয়া করার মাধ্যমে পরিপূর্ন সুস্থ হওয়া সম্ভব ইনশাআল্লাহ।
——————-
(খ) #তাকদীরঃ আল্লাহ তায়া’লা আপনার জন্য যা, যখন এবং যেভাবে ফয়সালা করেছেন এর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রাখা।
* উল্লেখ্যঃ আল্লাহ তায়া’লা চাইলেই আপনি সুস্থ হবেন বা আপনার কাংখিত বস্তু পাইবেন, আর তিনি না চাইলে সুস্থ হবেন না বা কাংখিত বস্তু পাইবেন না, মনে করতে হবে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তিনি আমার জন্য যেটা চান সেটাই হচ্ছে বা হবে এবং এতেই আমি সন্তুষ্ট, সর্বাবস্থায় আমি আল্লাহ তায়া’লার ফয়সালার উপরই সন্তুষ্ট আছি
(গ) #ধৈর্য_ও_নামাজঃ আপনার যা কিছু চাওয়ার তা পূর্ণ ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে বেশি বেশি করে চাইতে থাকুন, নামাজে বা মুনাজাতে চাইবেন।
আপনি কোনো প্রকারের তাবিজ-কবচ, তাগা এ জাতীয় কোনো কিছু ব্যবহার করবেন না,কখনো এগুলো ব্যবহার করে থাকলে, সেজন্য খাস দিলে তাওবা(আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন, কিছুতেই তাবিজ-কবচ, তাগা ব্যবহার করবেন না এবং কোনো যাদুকর-ওঝা-ফকির বা তাবিজ দেওয়া হুজুরদের কাছে যাবেন না বলে এই অঙ্গীকার) করবেন, আপনার সাথে বা বাড়িতে এসব কিছু থাকলে তা পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলবেন।
#রুকইয়াহ_বৈধতার_ব্যাপারে_পর্যালোচনাঃ
★ আল্লাহ তায়া’লার বানী-
وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا *
আমি অবতীর্ণ করেছি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া, কিন্তু তা সীমা লংঘন কারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে (আল-ইসরা -৮২)
আ’ওফ ইবনে মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন জাহেলিয়াতের যুগে আমরা বিভিন্ন রুকইয়া করতাম একদিন রাসুলুল্লাহﷺকে এটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন আমাকে তোমাদের রুকইয়ার পদ্ধতি দেখাও, এতে শিরক না থাকলে রুকইয়াতে কোনো সমস্যা নেই [সহীহ মুসলিম-৫৫৪৪]
বদনজরের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ যার নজর লেগেছে তাকে গোসল করিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করার নির্দেশ দেন [সহীহ মুসলিম, হাদিস-২১৮৮]
রুকইয়াহ_বৈধ_হওয়ার_জন্য_কিছু_শর্ত_প্রযোজ্যঃ
১. রুকইয়া হতে হবে মহান আল্লাহর বাণী দিয়ে অথবা আল্লাহর গুণবাচক নাম, প্রশংসা দিয়ে বা রাসুলুল্লাহﷺ থেকে সহিহ সনদে পাওয়া যায় এমন কিছু দিয়ে অথবা সাধারণভাবে আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে।
২. রুকইয়াতে ব্যবহৃত শব্দ বা কথা এমন স্পষ্ট হওয়া যার মানে বুঝতে পারা যায়, আর কোনো প্রতীক বা চিহ্ন বুঝা না গেলে, অস্পষ্ট হলে তা ব্যবহার না করা।
৩. যিনি রুকইয়াহ করবেন এবং যার জন্য এই রুকইয়াহ করবেন, তারা সবাই অবশ্যই এই বিশ্বাস রাখবেন যে, আল্লাহর অনুমতি এবং হুকুম ব্যতিত রুকইয়ার নিজস্ব কোনোই ক্ষমতা নেই।
৪. রুকইয়াতে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা বা শিরিকি প্রকাশ পায় এমন কোন কিছু না থাকা।
[Fatwa ash-Shami 6/363, Imam Al-Nawawi in Fath al-Bari by Ibn Hajar al-‘Asqalani {Rahimahullah}]
*********************
★ কুরআন মানসিক ও শারীরিক ব্যাধির মহৌষধ। (যাদুল মা‘আদ – 4/322-323)
* ইবনুল ক্বাইয়িম(রহঃ)বলেন “মক্কায় থাকাবস্থায় আমি অসুস্থ হলাম,,কাছে কোনো ডাক্তার কিংবা ওষুধের ব্যবস্থা ছিলো না, তখন আমি সূরা ফাতিহা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করেছি, জমজমের পানি নিয়ে কিছুটা পান করে এতে বারবার সূরা ফাতিহা পড়তে থাকলাম, তারপর এটা পান করলাম, এভাবে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলাম, তারপর থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আমি এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছি এবং সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেয়েছি।” [Zaad al-Ma’aad 3/188]
এ_বিষয়ে_বর্তমান_সময়ের_আলেমগণের_মতামতঃ
★একবার শাঈখ মোহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আল আশ শাঈখ (রহিমাহুল্লাহ)কে কুরআনের আয়াত দিয়ে পানি পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তিনি বলেন, এটা শারঈ’য়াহ অনুমোদিত এবং এতে সমস্যা নাই, বরং আলেমগণ এতে উৎসাহিত করেন [Majmoo’ Fataawaa wa Rasaa’il 1/92.]
শাঈখ সালিহ আল-ফাউযান(রহিমাহুল্লাহ) বলেন, একজন মুসলিমের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো যে, সে তার ভাইকে আয়াত বা দুয়া পড়ে শরীরে বা ব্যথার জায়গায় ফুঁ দিলো,এটা রুকইয়া শারঈয়াহ সে যদি পানিতে পড়ে নেয় এবং এটা পান করে সেটাও একই। [al-Muntaqaa 1/72 no. 131.]
★ তিনি আরও বলেন “যেহেতু রাসূলুল্লাহﷺ নিজে রুকইয়া করেছেন, নিজের রুকইয়াহ করেছেন এবং অন্যদেরকেও অনুমোদন দিয়েছেন, তাই যেভাবে ফুঁ দিয়ে ও পানি পড়ে রুকইয়ার কথা বর্ণিত আছে, সেভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে কুরআন পড়ে শরীরে বা ব্যথার স্থানে ফুঁ দিয়ে, পানি পান করিয়ে রুকইয়া করলে সেটা গ্রহণযোগ্য” [al-Muntaqaa 2/141]
শাঈখ সালিহ ইবনে আব্দুল আযিয আলে-শাঈখ বলেন, “অসুস্থ ব্যক্তিকে কুরআন পড়ে ফুঁক দেয়া অথবা পানিতে পড়ে ফুঁক দিয়ে সেটা তাকে খেতে দেয়া রুকইয়ার অংশ, এতে কোন ভুল নেই, কারণ সালাফ(পূর্বসূরি আলেমগণ)এভাবেই করেছেন,তাই সমালোচনার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এটা সুন্নাহ সম্মত আমল, রুকইয়ায় জিনিষপত্র কম ব্যবহার করা হলে এটা ততোই ভালো, এই কারণে আমার দাদা শাঈখ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম(আল্লাহ উনার উপর দয়া… করুন এবং জান্নাতে… উনার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন)বলেন, “অসুস্থ….হবার পর যত… দ্রুত রুকইয়াহ করা যাবে এবং এর মধ্যে যত…কম জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে’ এটা ততোই…উপকারী…… হবে।” [ad-Da’wah magazine p. 22, no. 1683 from Dhul-Qi’dah 1419 AH.]
সংকলনেঃ কামরুল ইসলাম (রায়হান)
ফেসবুক গ্রুপঃ রুকইয়াহ সেবা প্রকল্প গ্রুপ
ফেসবুক পেইজঃ রুকইয়াহ সেবা প্রকল্প পেইজ
ইউটিউব চ্যানেলঃ রুকইয়াহ সেবা